এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের পক্ষে শিক্ষাবিদরা, অধিকসংখ্যক কেন্দ্রে প্রস্তুতিও আছে!

News & Event

করোনায় শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বাতিল করা হয়েছে এই বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও না নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এসএসসি উত্তীর্ণদের অনলাইনে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে চলছে পরীক্ষাও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিতে রয়েছে এইচএসসি ও সমমানের প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী।

চলতি বছরের ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এই পরীক্ষাসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর সাড়ে পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সময়ে কলেজগুলোর সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি ধরে রাখতে না পেরে অনেকটাই হাল ছেড়ে দিয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়ালেখাবিমুখ হয়ে পড়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের প্রায় সব কিছুই খোলা রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি ভাবতে পারে সরকার। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে এবং বের হওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রের সংখ্যা তিন-চার গুণ বাড়াতে হবে। শ্রেণিকক্ষেও তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের বসাতে হবে। কেন্দ্রে ঢোকার সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার মুখে মাস্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল খোলার বিপক্ষেই মত রয়েছে শিক্ষাবিদদের।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে দ্রুততম সময়ে একটা উপায় খুঁজে বের করা যায় কি না, তা দেখতে হবে। কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করে একই পরীক্ষা দুই সেট প্রশ্নে সকাল-বিকালে নেওয়া যেতে পারে। এতে জটলা কম হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত, সব কটি পরীক্ষা নেওয়ার দরকার নেই। যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোই নেওয়া যেতে পারে।’ ভারতে বর্তমান পরিস্থিতিতেই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ‘প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট—এনইইটি’ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে অংশ নেবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। ভারতে ২১ সেপ্টেম্বর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। তবে ক্লাসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানেও ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেক দেশেই উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর কত দিন অপেক্ষা করা যায়? তবে এ জন্য কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করা দরকার, তা মেনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।’
জানা যায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এ বছর এই সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণই সম্ভব হয়নি। ফলে এমনতিইে শিক্ষার্থীদের প্রায় পাঁচ মাসের সেশনজটে পড়তে হবে। এরপর যদি এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণে আরো দেরি হয়, তাহলে উচ্চশিক্ষায় সেশনজট দীর্ঘ হবে।

সূত্র জানায়, ‘জেড’ আকৃতিতে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে পরীক্ষা নিলে কতগুলো শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন হতে পারে সে ব্যাপারে কাজ করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এতে একটি কক্ষে প্রথম বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী বসলে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসবে একজন। এ জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের অধীনে একাধিক উপকেন্দ্র নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ শিক্ষা বোর্ডগুলোও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় কখন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। নতুন সূচি প্রকাশের অন্তত ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা নেওয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। কারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবার আগে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *