৯৪ ল্যাবের ৩১টিতেই করোনা পরীক্ষা হয়নি

News & Event

নানা জটিলতায় প্রতিদিনই বেশ কিছু কেন্দ্রে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ থাকছে। কেন্দ্র বন্ধ থাকলে নমুনা সংগ্রহও কম হয়। এতে একেক দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম-বেশি হচ্ছে। আর প্রতি শুক্রবারই সরকারি ও বেসরকারি অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ থাকে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা) ৩১টি কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষাই হয়নি।

দেশে বর্তমানে ৯৪টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫৪টি এবং ঢাকার বাইরে ৪০টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রভিত্তিক নমুনা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ২১টি কেন্দ্রে এবং ঢাকার বাইরের ১০টি কেন্দ্রে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। অর্থাৎ, দেশের মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের ৩৩ শতাংশেই কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

 

ল্যাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরীক্ষা বন্ধ থাকছে। ল্যাবরেটরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাঝেমধ্যে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। ল্যাব জীবাণুমুক্ত করতে দু-তিন দিন ল্যাব বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবার পিসিআর মেশিনে একসঙ্গে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ বেশি না হলে বেসরকারি ল্যাব পরীক্ষা বন্ধ রাখে।

দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দিনাজপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার নমুনা এখানে পরীক্ষা হয়। দিনাজপুরে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ফলে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই চার জেলার বাসিন্দারা।

 

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রের আরটিপিসিআর যন্ত্রে কারিগরি সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়েছে। যন্ত্রটি মেরামতের কাজ চলছে। বর্তমানে নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

গত ১২ দিনের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগের শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ২২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। ১৬, ১৫ ও ১৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ একাধিক দিন। গত বৃহস্পতিবারও ১৬টি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

গাজীপুর জেলার চারটি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের কেন্দ্রটি। এই কেন্দ্র গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আসাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রটি জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে।

 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) গত জানুয়ারি মাসে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। ৩০ মার্চ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের আওতা বাড়ানো শুরু হয়। এরপর থেকে নতুন যুক্ত হওয়া ল্যাবরেটরিগুলোর অধিকাংশই বেসরকারি কেন্দ্র।

টাঙ্গাইল বক্ষব্যাধি ক্লিনিক এবং খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এই দুটি কেন্দ্রেই আরটিপিসিআর যন্ত্র নেই। ল্যাব দুটিতে যক্ষ্মা শনাক্তে ব্যবহৃত সিবি ন্যাট পরীক্ষার মাধ্যমে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে দিনে সর্বোচ্চ ২০টি পরীক্ষা করা যায়। ফলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কম হচ্ছে।

 

এর আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে স্থাপিত পিসিআর মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য গত ২৭ আগস্ট করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ হয়। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর ১ সেপ্টেম্বর আবার পরীক্ষা শুরু হয়। গত ৩১ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) পিসিআর মেশিনে ত্রুটি দেখা যায়। মেশিনের ত্রুটি সারানোর পর ৮ আগস্ট আবার পরীক্ষা শুরু হয়।

ল্যাবরেটরি কক্ষের নকশায় ত্রুটির কারণে গত মে মাসে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের পরীক্ষা কেন্দ্রে টানা ১৯ দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ ছিল। জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাবে পাঁচ দিন নমুনা পরীক্ষা হয়নি। ল্যাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজেও কয়েক দিন নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *