কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্ন বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আয়কর আইনের অধীন একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। ব্যক্তি পর্যায়ের রিটার্ন দাখিল করার সবশেষ সময় ৩০ নভেম্বর। কিন্তু কোম্পানি রিটার্ন দাখিলের সবশেষ সময় অর্থবছর শেষ হওয়ার পর ৭ম মাসের ১৫তম দিন।
অর্থাৎ, প্রতিবছর কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব কোম্পানিকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে দুবার সময়ের আবেদন করে এই সময় সর্বোচ্চ ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা যায়।
কোম্পানির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের আইনের প্রতিপালন করতে হয়। কোম্পানি নিবন্ধনের পর ভাড়ার চুক্তি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিন করার পর খুলতে হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পর যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন (Paid up Capital) পরিচালকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চেকের (A/C Payee) মাধ্যমে হস্তান্তর করতে হয়।
পরিশোধিত মূলধন অবশ্যই কোম্পানি যে অর্থ বছরে সৃষ্ট সেই অর্থবছরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করাতে হবে, না হলে পরিশোধিত মূলধন অগ্রাহ্য করা হবে। অর্থাৎ ট্যাক্স অফিস পরিশোধিত মূলধনের উপর ট্যাক্স নির্ধারণ করে দেবে।
কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে অবশ্যই অডিট রিপোর্ট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। তাই কোম্পানি গঠন করার পর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো অযাচিত লেনদেন না হয়। লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, অনেক কোম্পানি আছে যারা ব্যাংক লোন নেওয়ার উদ্দেশ্যে একই পরিমাণ টাকা একদিন রাখে আবার আরেকদিন ঠিক একই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে। যা কিনা একেবারেই অনুচিত কাজ।
পাশাপাশি নিয়ম হচ্ছে, কোম্পানির যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সমগ্র লেনদেন পরিচালিত হবে। যেমন, কোম্পানির কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, বাড়ি ভাড়া, পরিচালকদের সম্মানী ভাতা ইত্যাদি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে। এছাড়া যে কোনো বিল, ভাড়া, বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচের ক্ষেত্রে অবশ্যই আয়কর আইন ও ভ্যাট আইনের আলোকে ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তন করতে হবে।
ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তনের ক্ষেত্রে আয়কর আইন ও ভ্যাট আইনের আনুষঙ্গিক বিধান প্রতিপালন করতে হবে। প্রয়োজনে ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তনের পর ইস্যু করতে হবে সার্টিফিকেট। যার কাছ থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তন করা হয়েছে তাকে সার্টিফিকেট দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন সরবাহরকারীকে বিল পরিশোধের সময় ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তন করতে হবে। এই ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তনের পর চালানের মাধ্যমে ট্যাক্স-ভ্যাট অফিস বরাবর ব্যাংকে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পর চালানের কপি ও সার্টিফিকেট ওই সংশ্লিষ্ট সরবাহরকারী বরাবর ইস্যু করতে হবে।
একইভাবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোনো ট্যাক্স ও ভ্যাট অন্য কেউ যদি কর্তন করে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই একই পন্থায় চালান ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
সব হিসাব-নিকাশ নথিভুক্ত করে রাখতে হবে ঠিক এভাবে। তারপর অর্থবছর শেষ হওয়ার পর অডিটর নিয়োগ দিতে হবে। অডিটর, অডিট রিপোর্ট করার পর ট্যাক্স আইনের আলোকে ট্যাক্স গণনা করে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
একটি কোম্পানির আয়কর আইন ও অন্যান্য আইন প্রতিপালনের জন্য সাধারণত প্রতি বছরে নিম্নোক্ত রিটার্ন দাখিল করতে হয়। যথা
# কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্ন (বছরে একবার)
# ১০৮এ ধারায় রিটার্ন (বছরে একবার)
# উৎসে কর রিটার্ন (বছরে দুবার)
# প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন
#RJSC তে প্রতি বছর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে
মনে রাখতে হবে
কোম্পানি ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নিম্নোক্ত দলিলাদি জমা দিতে হবে।
#অডিট রিপোর্ট
#ব্যাংক স্টেটমেন্ট
#পরিশোধিত মূলধন (Paid up Capital) জমা দেওয়ার তথ্য
#লোন বা ব্যাংকঋণের তথ্য (যদি থাকে)
#সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যদি কোনো পণ্য বা সেবা সরবারহ করে থাকে সেক্ষেত্রে উৎসে করের সনদ ও চালানের কপি।
#ট্রেড লাইসেন্সের কপি ও ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে কর জমা দেওয়ার চালানের কপি।
এছাড়াও সেসব তথ্যাদি যা কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সেসব দলিলাদি অবশ্যই ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হবে।
মো. রাজু আহমেদ
আয়কর আইনজীবী
ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড
মোবাইল: ০১৯১০১১২৯৮৩, ০১৯৫৫৩৭৬১৪৯ হেল্পলাইন:: +৮৮০৯৬৯৬১১২৯৮৩
0 মন্তব্যসমূহ