ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) এখন জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। ঘরে বসেই ইন্টারনেটে বের করা যায় ই-টিন নম্বর। টিন নম্বর শুধু থাকলেই হবে না, এটা মেনটেইনও করতে হয়। কারা ই-টিন করতে পারবেন, কেন করবেন, আয়কর কীভাবে রিটার্ন জমা দেবেন, না জমা দিলে কী হবে- এসব বিষয়ে জাগো নিউজের পাঠকদের নিয়মিত জানাবেন আয়কর আইনজীবী মো. রাজু আহমেদ। আজ থাকছে ই-টিন কারা করবেন কেন করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত।
>>বর্তমানে ই-টিন ছাড়া আমাদের অধিকাংশ আর্থিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন, জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি বা সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কিংবা বিদেশে যেতে হলে ই-টিন এর প্রয়োজন হয়। আর ই-টিন থাকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
কোনো ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার যোগ্য কি না তা আমরা দুটি টেস্টের মাধ্যমে সহজেই জানতে পারি।
১. ব্যক্তির করযোগ্য আয় আছে কিনা। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির যদি করযোগ্য আয় থাকে তাহলে তার ই-টিন তৈরি করে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কোনো পুরুষ যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি আয় করে এবং নারী, তৃতীয় লিঙ্গ ও ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়সীয় আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হয় তাহলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
২. কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক তাদের ই-টিন করতে হবে এবং অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা এসব ব্যক্তিদের নিম্নোক্তভাবে শ্রেণিবিন্যাস করতে পারি।
>>যারা ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণ করেছেন
>>করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে
>>আয় বছরের পূর্ববর্তী তিন বছরের যে কোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা আয় করযোগ্য হয়ে থাকে
>>করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার এমপ্লয়ি হন
>>করদাতা যদি কোনো ফার্মের অংশীদার হন
>>করদাতা যদি সরকার অথবা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের বা প্রচলিত কোনো আইন, আদেশ বা দলিলের মাধ্যমে গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের কর্মচারী হয়ে আয় বছরের যে কোনো সময় ১৬ হাজার টাকা বা বেশি পরিমাণ মূল বেতন আহরণ করেন
>>করদাতা যদি কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা (যে নামে অভিহিত হোক না কেন) বেতনভোগী কর্মী হন
>>করদাতার আয় কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকে
>>করদাতা যদি মোটরগাড়ির মালিক হন
>>করদাতা যদি কোন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা করেন
>>করদাতার যদি ভ্যাট নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্য হন
>>করদাতা যদি চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট ও ম্যনাজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধিত হন
>>করদাতা যদি কোনো আয়কর পেশাজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধিত হন
>>করদাতা যদি কোনো বণিক বা শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্য হন
>>করদাতা যদি কোনো পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের কোনো পদ বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হন
>>করদাতা যদি কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোনো স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন
>>কোনো করদাতা যদি কোনো কোম্পানির বা গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে থাকেন
>>করদাতা যদি মোটরযান, স্পেস/স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবারহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করেন
>>করদাতা যদি লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক হন
>>সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে মোট বিনিয়োগ দুই লাখ টাকা অতিক্রম করলে
>>দুই লাখ টাকার অধিক পোস্টাল সঞ্চয় হিসাব খুলতে
>>সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশনে।
কোনো ব্যক্তি যদি বর্ণিত তথ্যের যে কোনো একটি শ্রেণিতে পড়ে তাহলে তাকে অবশ্যই ই-টিন তৈরি করতে হবে এবং আবশ্যিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
মো. রাজু আহমেদ
আয়কর আইনজীবী
তথ্যসূত্র: আয়কর নির্দেশিকা ২১-২২ ও আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪
ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড
মোবাইল: ০১৯১০১১২৯৮৩, ০১৯৫৫৩৭৬১৪৯ হেল্পলাইন:: +৮৮০৯৬৯৬১১২৯৮৩
0 মন্তব্যসমূহ