দলিলে এবং দখলে গড়মিল – ক্রেতার করণীয়
জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এক শ্রেণীর প্রতারক বিক্রেতা আছে যারা একই জমি একাধিকবার বিক্রি করার বন্দোবস্ত করে থাকে। কখনো সফল হয়, কখনো বা জানা শোনা অথবা জমির কাগজপত্র বুঝে এমন কারো হাতে ধরা পড়ে যায়। কিন্তু ততদিনে কারো না কারো সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়। এই শ্রেণীর লোক শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও আপনি দেখবেন যারা কিনা একটি জমি কয়েকজন বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে শেষের দিকে কোনো একজনের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে পালিয়ে যায়। একটি জমি গ্রাম অঞ্চলে কয়েক দফা বিক্রি করে টাকা নিয়ে শহরে পালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। সেই ক্ষেত্রে শহর অঞ্চলে একটি জমির মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা হলে, দুই বা তিন জনের কাছে বিক্রি করে কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে সেটেল হয়ে যাওয়া এখন রূপকথা নয়। তাই জমি ক্রয়ের সাথে সাথেই জমিতে নিজের নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া উচিত। তারও আগে জমিটি কারো কাছে বিক্রি করা হয়েছে কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করে নেয়া উচিত। যাইহোক যদিও আজকের আলোচনার বিষয় এটি নয়, তবুও কিছুটা প্রাসঙ্গিক হওয়াতে শুরুতেই একটি পরামর্শ বা উপদেশ দিয়ে শুরু করলাম যাতে পটভূমিটা তৈরি হয়ে যায়।
উপরে যে প্রতারক শ্রেণীর কথা বললাম এই প্রতারক শ্রেণীর ছাড়াও কখনো কখনো ইনোসেন্ট বা ভদ্রলোক থেকে জমি ক্রয় করেও আপনি ক্ষতির শিকার হতে পারেন। আজকের আলোচনা তাদেরকে নিয়ে। একজন ভদ্র বা ইনোসেন্ট বিক্রেতা আপনার কাছে জমি বিক্রি করেছে এবং আপনি জমি ক্রয় করেছেন। এই ক্ষেত্রে আপনাদের উভয়ের অজান্তেই একটা টেকনিক্যাল ভুল হয়ে যেতে পারে যার জন্য আপনি ক্রেতা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখবেন, জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কখনোই বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্রেতা। বিক্রেতা শুধুমাত্র তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যখন যতটুকু জমি বিক্রি করার কথা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি দলিল বিক্রেতার অজান্তে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অন্য কোন ভাবে দলিলের মধ্যে ছোটখাটো ত্রুটি হলে সেটা পুরোটাই গিয়ে বর্তায় ক্রেতার ঘাড়ের উপর। এজন্য ক্রেতা হিসেবে আপনাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে, বিক্রেতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি জানতে হবে আপনাকে। আমাদের ওয়েবসাইট জুড়ে ক্রেতা যাতে জমি ক্রয়ের সময় ত্রুটি না করে, সেই বিষয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা করা হয়ে থাকে। ক্রেতা ক্রয়ের সময় সচেতন থাকলে নিজে যেমন ঝামেলা এড়াতে পারেন, ঠিক তেমনি জমি নিয়ে ভূমি অফিস থেকে শুরু করে আদালত প্রাঙ্গণের জটও কমাতে পারেন। তাই, Prevention is better than cure. পড়ুন, জানুন, সচেতন হয়ে নিজের অধিকার আদায় করে নিন।
বিক্রেতার জ্ঞাতসারে অর্থাৎ বিক্রেতার জানা মতে অথবা অজান্তেও যদি আপনার সাথে একটি জমি হস্তান্তর করার উদ্দেশ্যে কোন দলিল হয়ে থাকে যে দলিলে জমির পরিমাণ যা উল্লেখ করা হয়েছে সরজমিনে জমির পরিমাণ ঠিক তা না থাকে, সেই ক্ষেত্রে আপনার করনীয় কি? আজকে আমরা সেই সম্বন্ধে একটু বেশী বাস্তবসম্মত আলোচনা করব। ধরুন আপনি একজন বিক্রেতার কাছ থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করলেন, সেই ক্ষেত্রে যদি ধরে নেই যে জমিটি গ্রাম অঞ্চলে এবং শতাংশ প্রতি এক লক্ষ টাকা করে মূল্য, সেক্ষেত্রে আপনার জমির মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১০ লক্ষ টাকা। এখন দলিল রেজিস্ট্রি করার পরে আপনি যখন জমিতে গেলেন বাড়ি করার উদ্দেশ্যে তখন গিয়ে দেখলেন জমিতে ১০ শতাংশ জমি নেই, সেখানে রয়েছে ৯ শতাংশ, তখন বাকি ১ শতাংশ জমি কোন মতেই পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখলেন, ঐ ব্যক্তি আসলে ৯ শতাংশ জমিরই মালিক ছিল বা প্রতিবেশী কার ভেতরে ১ শতাংশ ঢুঁকে গেছে। এখন আপনি তো আর টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে প্রতিবেশীর সাথে বিরোধ সৃষ্টির দরকার নেই। তাহলে,এই ১ শতাংশ জমির জন্য আপনি কি করবেন? ঝগড়া, মারামারি, কাটাকাটি করা তো আপনার মত ভদ্রলোক দ্বারা সম্ভব নয়। তাই, প্রথমে আপোষের মাধ্যমে মীমাংসা করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলে তখন বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৪ ধারায়, একটি চুক্তির অংশবিশেষ সুনির্দিষ্টভাবে সম্পাদন, যেখানে অসম্পাদিত অংশ ছোট; এই সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর এক ধরনের চুক্তি এবং আপনাদের মধ্যকার হস্তান্তরিত চুক্তিটির বড় অংশই সম্পাদিত হয়েছে অর্থাৎ ১০ শতাংশ জমির মধ্যে ৯ শতাংশ জমি আপনাকে সরজমিনে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট অংশটি অর্থাৎ এক শতাংশ জমি আপনাকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি, সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ জমির হিসাব বুঝে না পাওয়াতে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যদিও এখানে আমি শুধুমাত্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই দিকটি তুলে ধরছি, কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় যে ১ শতাংশ জমির জন্যই পুরো সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় বা সন্তানদের মাঝে সুষম বণ্টন সম্ভব হয় না বা যে পরিকল্পনা অনুসারে উক্ত জমিতে বাড়ি করার চিন্তাভাবনা করেছেন এক শতাংশ জমি কম হওয়ার কারণে আপনার উক্ত পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বিক্রেতাকে আপনি সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে চেষ্টা করবেন আপনার বাকি ১ শতাংশ জায়গা দখল পুনরুদ্ধার করে দিতে। দখল বুঝিয়ে দিতে গিয়ে যদি বিক্রেতা সেই জমির মধ্যে নিজের মালিকানা থেকে থাকে বা অন্যের কাছ থেকে উদ্ধার করে আনতে পারেন, তাহলে আপনাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন; তখন চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু যদি বিক্রেতার নিজেই ওই জমির মালিকানা না থাকে বা অন্যের কাছ থেকে উদ্ধার করতে না পারেন অর্থাৎ তিনি বৈধভাবে ৯ শতাংশ জমির মালিক মাত্র অথবা জরিপের টেকনিক্যাল কারণে এক শতাংশ কম জমি রয়েছে(এই ত্রুটি নিয়ে বিস্তারিত লিখবো কখনো সময় পেলে), সে ক্ষেত্রে বিক্রেতার কিছু করার না থাকলে, কিভাবে এই চুক্তিটি সম্পাদন করা যায় তার সমাধান সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৪ ধারাতে বলা হয়েছে। যেহেতু চুক্তির বড় অংশটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সে ক্ষেত্রে বাকি অংশটুকু অর্থাৎ ছোট অংশটুকুটি যা আমাদের উদাহরণ মতে ১ শতাংশ, এই ১ শতাংশ জমি কম পাওয়ার ফলে চুক্তির সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়নের জন্য আদালতে মামলা করলে আদালত, যেহেতু বিক্রেতা ১ শতাংশ জমি আপনাকে হস্তান্তর করতে পারেনি তার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা ১ শতাংশ জমির যে ক্রয় মূল্য ছিল তা আপনাকে ফেরত দিতে পারে। অর্থাৎ, আপনি শুধুমাত্র ১ লক্ষ টাকা পেতে পারেন ১ শতাংশ জমির ক্রয় মূল্য হিসেবে(যেহেতু উদাহরণ হিসেবে জমির ক্রয় মূল্য ১ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছিল) আবার আদালত চাইলে বিক্রেতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও নির্দেশ দিতে পারেন। আশা করি, বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
ধরুন আপনি একজন বিক্রেতার কাছ থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন কিন্তু ওই ব্যক্তি ওই জমির ৫ শতাংশ বা তারও কম অংশের মালিক। সেই ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে উভয় পক্ষ মিলে যদি চুক্তিটি বাতিল করতে চান, সেই ক্ষেত্রে উভয়ের সম্পত্তিতে উক্ত দলিলটি বাতিল করতে পারবেন। কিন্তু, যদি আপনি ক্রেতা হিসেবে মনে করেন যে, আপনি উক্ত চুক্তিটির যতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব ততটুকুই করবেন, অর্থাৎ ছোট অংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হওয়ায় ছোট অংশ বাস্তবায়ন করবেন এবং বাকি যে অংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই অংশের জন্য বাড়তি ক্ষতিপূরণের অধিকার পরিহার করে তবেই কেবল ক্রয়মূল্যের জন্য আবেদন করে সেটি ফেরত দেওয়া সম্ভব। আরও সহজ ভাষায় বললে, আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি ক্রেতা যদি চান বিক্রেতা বৈধ ভাবে যতটুকু জমির মালিক, আমি ঠিক ততটুকুই যোগ্য ক্রয়মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে ক্রয় করবো আর বাকি অংশ যেহেতু বিক্রেতা কোন মতেই আমাকে হস্তান্তর করতে পারবে না হোক সেটা তার নিজের কারণে বা অন্য তৃতীয় কোন পক্ষের কারণে, সেক্ষেত্রে আমি বাকি অংশের জন্য যদি অর্থ পরিশোধ করে থাকি সেটি ফেরত পেতে পারবো কিন্তু কোন মতেই ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবো না। আগের পর্বে আমরা দেখেছিলাম ক্ষতিপূরণের অধিকার রয়েছে কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনি ক্রেতা হিসেবে কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। আপনাকে ক্ষতিপূরণের অধিকারটা বাদ দিয়ে মানে আপনি ক্ষতিপূরণের দাবি না করেই আপনাকে শুধুমাত্র যতটুকু জমি রয়েছে ততটুকুর উপর দলিল বা চুক্তি সম্পাদনের জন্য আবেদন করে আদালতের কাছে যেতে হবে। এটাই একমাত্র উপায় চুক্তিটি আংশিকভাবে হলেও বাস্তবায়ন করার, অন্যথায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৪ এবং ১৫ ধারায় আমরা দেখলাম যে, কোন একটি চুক্তি যদি আংশিকভাবে সম্পাদন যোগ্য হয় তাহলে বাকি অংশ কিভাবে ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে অথবা শুধুমাত্র সম্পাদিত অংশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে চুক্তির সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন সম্ভব। এরই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৬ ধারায় দেখতে পাবো, আমরা কিভাবে আরো অনেক ধরনের ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করতে পারি। ধরুন একজন ব্যক্তি আপনার কাছে ২ বা ৩ দাগে সম্পত্তি বিক্রি করেছে। এই টেকনিক্যাল বিষয়টা একদমই সচরাচর ঘটে থাকে। যারা একেবারেই জমিজমা সম্বন্ধে ধারণা রাখেন না, তাদের জন্য জটিল মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে একটি হস্তান্তরিত জমি সবসময় একই দাগের মধ্যে থাকবে সেটি কিন্তু নয়। কয়েকটি দাগের মধ্যে একটি জমি বিক্রি হতে পারে আবার একই দলিলে কয়েকটি দাগের ভিন্ন ভিন্ন জমিও বিক্রি করাতে হতে পারে। এখন একাধিক দাগের জমি বিক্রি করার ফলে আপনি গিয়ে দেখলেন একটি দাগ ব্যতীত বাকি দাগগুলোতে ওই লোকের বৈধ মালিকানা নেই। সে ক্ষেত্রে বাকি যে এক বা একাধিক দাগ রয়েছে সেই দাগের জমি আপনি ক্রয় করতে চাইলেও যেহেতু ওই লোকের বৈধ মালিকানা নেই সে ক্ষেত্রে আপনি আবার জটিলতায় পড়ে গেলেন। আপনার যেহেতু সম্পূর্ণ চুক্তি কার্যকর করা যাচ্ছে না, তাহলে কি পুরো চুক্তি বাতিল হবে নাকি বাকি অংশের জন্য ক্ষতিপূরণ বা চুক্তি মূল্য ফেরত পাবেন; যখন এইসব নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি তখন সমাধানের উপায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৬ ধারায়। এই ধারা অনুযায়ী স্বতন্ত্র অংশের সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করা সম্ভব। এখন যেহেতু বিক্রেতার একটি দাগে মালিকানা রয়েছে, অন্য দাগে নেই, সেক্ষেত্রে আপনি যেই দাগে বিক্রেতার মালিকানা আছে সেই দাগের উপর সুনির্দিষ্টভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারবেন। বাকি দাগগুলোর জন্য আপনি আগের ধারাগুলোর মত ক্রয় মূল্য ফেরত পাবেন।
এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে আমরা অনেক সময় সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনেক কিছু করে থাকি বিশেষ করে জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা জমির প্রকৃত যে মূল্য সেটি যদি মৌজা রেট এর চাইতে বেশী হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমরা শুধু মৌজা রেট অনুসারেই দেখিয়ে থাকি। জমির মূল্য ১ লক্ষ টাকা শতাংশ প্রতি, যেখানে কিনা মৌজা রেট হচ্ছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। এখন আপনি মাথায় রাখতে হবে রেজিস্ট্রেশন খরচটি নির্ধারণ করা হয় জমির মোট মূল্যের উপর। সে ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত শুধুমাত্র মৌজা রেট টা দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে থাকি, যাতে আমাদের হস্তান্তর দলিলের সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি’টা কম আসে। কিন্তু উপরে আমরা যে আলোচনা করেছি সেই অনুসারে যদি আপনার কিছু জমি কম থাকে যেমন ধরুন এক শতাংশ জমি কম রয়েছে সেটার জন্য আদালত আপনাকে ক্রয় মূল্য হিসেবে ১ শতাংশ জমির মূল্য ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিবেন। সে ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ওই মৌজা রেট পাবেন; যদি না বিক্রেতা আপনাকে প্রকৃত মূল্য ফেরত না দেয়। আদালত তো দলিলে উল্লেখিত মূল্যকেই প্রকৃত মূল্য হিসেবে ধরে নিবেন। তাই, সর্বদা জমির প্রকৃত মূল্যই দলিলে উল্লেখ করা উচিত, কমও না বেশীও না। কম হলে কি সমস্যা হবে আবার বেশী হলেও কি কি সমস্যা হতে পারে, সেটি নিয়ে সামনে বাস্তবসম্মত উদাহরণ নিয়ে লিখবো।
দুইটি পর্ব এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৪, ১৫ এবং ১৬ ধারা আশা করি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। তবে, এই ধারায় আপনি ঝামেলায় পড়ে প্রতিকার পাবেন। কিন্তু, আমরা জানি Prevention is better than cure. কেমন হয়, আমরা একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এমন পরিস্থিতিতেই না পড়লাম। আমরা যে দুই পর্বে আলোচনা করেছি ৩ ক্ষেত্রেই আপনাকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থাৎ দলিলে উল্লেখিত জমির পরিমাণ বুঝে না পাওয়ার জন্যই প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাথায় রাখতে হবে প্রতিকারটুকু আপনাকে আদালতে মামলা করার মাধ্যমেই আদায় করতে হবে। কেন শুধু শুধু নিজের হক হালাল টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করার পরে আবার আদালতের আঙিনায় দৌড়াদৌড়ি করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে বা জমি বুঝে পেতে হবে। তাই অবশ্যই লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করার আগে সামান্য কিছু টাকা খরচ করে জমিটি আগে মেপে দেখবেন। প্রয়োজনে লেনদেন করার আগেই বিক্রেতার মাধ্যমে জমির চৌহদ্দি নির্ধারণ করে খুঁটি (প্রয়োজনে অস্থায়ী খুঁটি) স্থাপন করবেন যাতে আশেপাশে কারো উক্ত জমির সীমানা নিয়ে আপত্তি থাকলে সেটা আপনি ক্রয় করার আগেই জানতে পারেন। সীমানাও নির্ধারণ হয়ে গেলো, জমির পরিমাণও আপনার জানা হয়ে গেলো; এবার সেই অনুযায়ী দলিল করলে জমি ক্রয় করার পরে আপনাকে আর আদালত প্রাঙ্গণে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। আজ এতটুকুই; পড়ুন, জানুন, বুঝুন, সচেতন হোন, বিপদ এবং জটিলতা এড়িয়ে চলুন।
ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড
মোবাইল: ০১৯১০১১২৯৮৩, ০১৯৫৫৩৭৬১৪৯ হেল্পলাইন:: +৮৮০৯৬৯৬১১২৯৮৩
0 মন্তব্যসমূহ