Header Ads Widget


 

কাপাসিয়ায় দখলের থাবা, জ্ঞানের কান্না: আর কতকাল এই অচলায়তন?

কখনো ভেবেছেন, একটা জাতি কীভাবে পিছিয়ে যায়? উত্তর একটাই, যখন সেই জাতি তার জ্ঞানের উৎসগুলো উপেক্ষা করে, অথবা সেগুলো দখলের থাবায় হারিয়ে যায়। এমনই এক মর্মান্তিক বাস্তবতা আজ কাপাসিয়ায়, যেখানে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরির উপর পড়েছে দখলের ছায়া, আর জ্ঞানচর্চার স্থানটি দাঁড়িয়ে আছে নিষ্প্রাণ হয়ে; যেন এক নীরব কান্না।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রাঙ্গণ

কাপাসিয়া শুধু একটি উপজেলা নয়, এটি একটি জনপদের ভবিষ্যৎ। আর সেই ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে তখনই, যখন আমরা জ্ঞানচর্চার স্থানগুলো রক্ষা করব, লালন করব। লাইব্রেরির চাবি কেবল দরজায় নয়, আমাদের বিবেকেও ঘুরাতে হবে।


উপজেলা প্রশাসন নিশ্চয়ই একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে 
পাবলিক লাইব্রেরির ও স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কেন পাবলিক লাইব্রেরির গুরুত্ব বিবেচনা করা হয়নি? কেন লাইব্রেরির ভবন ও জমি পুনরুদ্ধার করে জ্ঞানপিপাসু সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি?


একটি পাবলিক লাইব্রেরি কেবল কিছু বইয়ের সংগ্রহ নয়, এটি একটি সমাজের জ্ঞান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, সাহিত্যপ্রেমী সকলেরই একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরির অধিকার রয়েছে। যেখানে তারা নির্বিঘ্নে জ্ঞান চর্চা ও মননকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।


বর্তমানে যা চিত্র, তাতে মনে হয় যেন একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে একটি সরকারি সম্পদকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। আর এর ফলস্বরূপ বঞ্চিত হচ্ছে কাপাসিয়ার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। এই অচলায়তন আর কতদিন চলবে? প্রশাসনের অভ্যন্তরেই যদি একটি পাবলিক লাইব্রেরি এমন অবহেলার শিকার হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় জ্ঞানের আলো খুঁজবে?


সময় এসেছে উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সচেতন মহলের সম্মিলিতভাবে এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার। অবিলম্বে পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, এটিকে দখলমুক্ত করার এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাবলিক লাইব্রেরির নামে সেখানে এখন নেই পাঠক, নেই তত্ত্বাবধান, নেই কোনো পরিকল্পিত কার্যক্রম।


মনে রাখতে হবে, একটি সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরি একটি সুস্থ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের অপরিহার্য ভিত্তি। অথচ মাঠপর্যায়ে আমরা দেখি ঠিক উল্টো চিত্র; যেখানে লাইব্রেরি পড়ে থাকে অবহেলায়, আর জ্ঞানচর্চা হারিয়ে যায় প্রশাসনিক উদাসীনতায়।


কাপাসিয়ার মানুষের জ্ঞানার্জনের অধিকার রক্ষা করতে, পাবলিক লাইব্রেরিটি অবিলম্বে দখলমুক্ত করতে হবে। এটি আধুনিক ও ডিজিটাল পাঠাগারে রূপান্তর করতে হবে। স্থানীয় তরুণ সমাজকে লাইব্রেরি ব্যবহার ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু করে, এই অচলায়তনের অবসান ঘটিয়ে একটি প্রাণবন্ত পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। আর কালক্ষেপণ না করে, দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই জ্ঞানকান্নার নিবৃত্তি ঘটানো উচিত। নইলে একদিন ইতিহাস বলবে, এই জাতি জ্ঞান হারিয়ে শুধু দখলই করেছে।


কলামটি লিখেছেন: এম এস হাবিবুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, নিউজ সমাহার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ