কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইন হলো একটি আইনি অধিকার যা সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীত রচয়িতা, শিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তাদের সৃষ্টিকর্মের উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। এই আইন তাদের কাজ অননুমোদিতভাবে ব্যবহার, পুনরুৎপাদন, বিতরণ বা পরিবর্তন করা থেকে অন্যদের বিরত রাখে। কপিরাইট মূলত লেখকের জীবনকাল এবং তার মৃত্যুর পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বহাল থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সৃজনশীল কাজকে উৎসাহিত করা এবং নির্মাতাদের তাদের মেধার স্বীকৃতি ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে "কপিরাইট আইন, ২০০০" এই সংক্রান্ত প্রধান আইন।
কপিরাইট করার নিয়ম:
বাংলাদেশে কপিরাইট নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক না হলেও, আইনি সুরক্ষা এবং মালিকানা প্রমাণে এটি সহায়ক। কপিরাইট নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. আবেদনপত্র পূরণ: নির্ধারিত ফরমে (সাধারণত অনলাইন এবং অফলাইনে উপলব্ধ) প্রয়োজনীয় তথ্যসহ আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রে লেখকের নাম, ঠিকানা, জাতীয়তা এবং সৃষ্টিকর্মের বিবরণ উল্লেখ করতে হয়। প্রতিটি স্বতন্ত্র কাজের জন্য পৃথক আবেদন করতে হয়।
২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল: আবেদনপত্রের সাথে নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হয়: * সৃষ্টিকর্মের দুটি কপি (যেমন: বইয়ের পাণ্ডুলিপি, গানের স্বরলিপি, চলচ্চিত্রের ডিভিডি, সফটওয়্যারের সোর্স কোড ইত্যাদি)। * আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। * ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি ফি পরিশোধের রসিদ। * যদি প্রযোজ্য হয়, লেখকের কাছ থেকে স্বত্ব হস্তান্তরের দলিল (Deed of Assignment)। * যদি আইনজীবী মারফত আবেদন করা হয়, তবে ওকালতনামা। * শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে, যদি কাজটিতে কোনো ব্যক্তির ছবি থাকে তবে তার অনুমতিপত্র (NOC)। * যদি কাজটি পূর্বে প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং প্রকাশক আবেদনকারী না হন, তবে প্রকাশকের অনুমতিপত্র (NOC)।
৩. আবেদনপত্র জমা দেওয়া: পূরণকৃত আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরাসরি কপিরাইট অফিসে অথবা অনলাইন পোর্টালে জমা দিতে হয়। কপিরাইট অফিসের ঠিকানা:
কপিরাইট অফিস
৩২, বিচারপতি এস.এম. মুরশেদ সরণি
আগারগাঁও, শের-এ-বাংলা নগর
ঢাকা-১২০৭, বাংলাদেশ।
৪. পরীক্ষা ও যাচাই: আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর, কপিরাইট অফিস কর্তৃক সৃষ্টিকর্মের মৌলিকতা এবং দাখিলকৃত তথ্যাদি যাচাই করা হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত তথ্য বা স্পষ্টীকরণের জন্য আবেদনকারীকে অনুরোধ করা হতে পারে।
৫. আপত্তিের সুযোগ: আবেদনপত্র গৃহীত হওয়ার পর, রেজিস্টার কর্তৃক জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে একটি নোটিশ জারি করা হয়। যদি কারো কোনো আপত্তি থাকে, তবে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জানাতে পারেন।
৬. নিবন্ধন ও সনদ প্রদান: যদি কোনো বৈধ আপত্তি না থাকে এবং সবকিছু সঠিক থাকে, তবে রেজিস্টার কপিরাইট নিবন্ধন করেন এবং আবেদনকারীকে একটি সনদ প্রদান করেন। এই সনদ কপিরাইট মালিকানার প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সরকারি ফি:
কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি ধার্য করা আছে। বিভিন্ন প্রকার কাজের জন্য এই ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীত বিষয়ক বা শিল্পকর্মের জন্য ৫০০ টাকা এবং সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্মের জন্য ২০০০ টাকা ও সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের জন্য ১০০০ টাকা ফি ধার্য করা হয়ে থাকে। তবে, এই ফি পরিবর্তনযোগ্য। হালনাগাদ ফি জানার জন্য বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ওয়েবসাইট (
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:
১. সঠিকভাবে পূরণকৃত কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন আবেদনপত্র।
২. সৃষ্টিকর্মের দুটি কপি।
৩. আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
4. সরকারি ফি পরিশোধের ট্রেজারি চালান।
৫. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বত্ব হস্তান্তরের দলিল (স্ট্যাম্প পেপারে)।
৬. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লেখকের/প্রকাশকের/অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতিপত্র (NOC)।
৭. আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করলে ওকালতনামা।
উৎস:
- * কপিরাইট আইন, ২০০০ (বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০০০)।
- * বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ওয়েবসাইট:
https://copyrightoffice.gov.bd/ - * S.S. Rana & Co. - Copyright Law in Bangladesh- An Overview:
https://ssrana.in/ufaqs/copyright-law-bangladesh/ - * Supreme IP Law Firm in Bangladesh - Copyright Registration in Bangladesh: Step-by-Step Guide:
https://www.supremeip.com/service/Copyright-Registration-in-Bangladesh:-Step-by-Step-Guide - * Counsels Law Partners (CLP) - Copyright Registration Process in Bangladesh 2024:
https://www.counselslaw.com/copyright-registration-process-in-bangladesh/
এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে কপিরাইট আইন, এর নিবন্ধন প্রক্রিয়া, সরকারি ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা মাত্র। আইনি বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
0 মন্তব্যসমূহ