Header Ads Widget


 

বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার (ইকমার্স) জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কিন্তু এই খাতের ভ্যাট (VAT) ও ট্যাক্স (Tax) ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বিকাশের জন্য সময়োপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব ভ্যাট ও ট্যাক্স নীতিমালা প্রয়োজন। অতিরিক্ত কর ও জটিলতা সরিয়ে দিলে নতুন উদ্যোক্তারা সাহস পাবে, এবং সরকারও অধিকতর আয়কর ও রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হবে। সহজ নীতিমালা ও ডিজিটাল প্রক্রিয়া দেশের অনলাইন ব্যবসা খাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। কিন্তু আয়কর সংক্রান্ত নানান নিয়ম-নীতির কারণে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা সহজ হচ্ছে না। অনেক উদ্যোক্তা জানেন না কখন, কোথায়, কীভাবে কর দিতে হবে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সহজ সমাধান খোঁজা এখন সময়ের দাবি।
ই-কমার্স খাতে ভ্যাট-ট্যাক্স


ই-কমার্স ব্যবসায় ভ্যাট ও ট্যাক্সের প্রধান সমস্যা:

১. অনলাইন সেবার উপর অতিরিক্ত কর: বাংলাদেশে যারা ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রি করেন, তাদের অনলাইন সার্ভার ভাড়া, ইন্টারনেট বিলের মতো অপরিহার্য খরচ রয়েছে। দুঃখজনকভাবে, এসব খরচের উপরও ভ্যাট ও আয়কর দিতে হয়। বিশেষত অনলাইন সার্ভার পেমেন্ট বা ক্লাউড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০% আয়কর এবং ৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় আর্থিক বোঝা।

২. আয়কর নীতিতে অস্পষ্টতা: প্রচলিত আয়কর আইনে অনলাইন ব্যবসাকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের সিক্সথ সিডিউলের পার্ট এ প্যারাগ্রাফ ৩৩ মূলত গতানুগতিক সেবার কথা বলে। অনলাইন ব্যবসার স্বাতন্ত্র্য বিবেচনা করে এর অন্তর্ভুক্তি জরুরি, যা এই খাতের কর ব্যবস্থাপনাকে আরও সুস্পষ্ট করবে।

৩. অনলাইন ফার্মেসীর চ্যালেঞ্জ: অনলাইন ফার্মেসীগুলো ঔষধ উৎপাদক ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট দিয়ে ঔষধ কেনে। এরপর যখন তারা বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বা গ্রাহকের কাছে সেই ঔষধ সরবরাহ করে, তখন ২% হারে অগ্রিম আয়কর (AIT) কাটা হয়। ঔষধের ব্যবসায় লাভের মার্জিন সাধারণত ৫-৭% এর বেশি নয়। এই অবস্থায় ২% AIT একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষত স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরি পণ্যের ক্ষেত্রে এই কর যৌক্তিক নয়। এছাড়াও ঔষধ ডেলিভারির চার্জের উপর ১৫% ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।

৪. ডেলিভারি খাতের ব্যয় বৃদ্ধি: ই-কমার্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পণ্য ডেলিভারি। ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত মোটর যান ও মোটর ভ্যান ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধার্যকৃত ট্যাক্স এই খাতের পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এই ট্যাক্স মওকুফ করা গেলে ডেলিভারি সেবা আরও সাশ্রয়ী হতে পারে।

৫. বিশেষজ্ঞ পরামর্শের অভাব: বর্তমানে অনেক ভ্যাট ও ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ প্রচলিত ব্যবসার নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত থাকলেও, ই-কমার্স ব্যবসার বিশেষত্ব সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। ফলে অনলাইন ব্যবসায়ীরা কিভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করবেন, সেই বিষয়ে সঠিক ও কার্যকরী পরামর্শ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

৬. খাবার ডেলিভারিতে উচ্চ ভ্যাট: ফুড ডেলিভারি সার্ভিস (এফডিএস), বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ও বাসা থেকে রান্না করা খাবার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জের উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়। এই হার কমিয়ে ৫% করা হলে গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী উভয়েই উপকৃত হবেন।

৭. নিজস্ব ডেলিভারিতে ভ্যাট: যেসব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শুধুমাত্র নিজেদের উৎপাদিত বা সংগৃহীত পণ্য বিক্রি করে এবং নিজেরাই ডেলিভারি করে, তারা ডেলিভারি সেবার মাধ্যমে কোনো অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে না। তাদের ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জের উপর ভ্যাট থাকা অনুচিত।

৮. ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে দ্বৈত কর: ফেসবুক বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য পেমেন্ট করার সময় ১৫% ভ্যাট দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় দুইবার ভ্যাট আদায়ের অভিযোগ রয়েছে, যা অনলাইন ব্যবসার বিপণন খরচ বাড়িয়ে তোলে এবং পণ্যের দামের উপর প্রভাব ফেলে।

সম্ভাব্য সমাধান:

ই-কমার্স খাতের এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

১. অনলাইন সেবার অপরিহার্য খরচ যেমন সার্ভার ভাড়া ও ইন্টারনেট বিলের উপর ভ্যাট ও আয়কর মওকুফ করা অথবা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো প্রয়োজন।

২. আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে অনলাইন ব্যবসাকে একটি স্বতন্ত্র সেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এর জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

৩. অনলাইন ফার্মেসীর ক্ষেত্রে ঔষধ ও স্বাস্থ্য পণ্য সরবরাহের উপর অগ্রিম আয়কর (AIT) সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা এবং ঔষধ ডেলিভারির উপর ধার্যকৃত ১৫% ভ্যাট মওকুফ করা উচিত।

৪. পণ্য ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত বাণিজ্যিক যানবাহন ক্রয়ের ক্ষেত্রে ট্যাক্স ছাড় দেওয়া এই খাতের লজিস্টিকস ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।

৫. ই-কমার্স ব্যবসার ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এনবিআর-এর অধীনে একটি বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে। এছাড়াও, এই বিষয়ক তথ্য সহজে পাওয়ার জন্য একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট বা তথ্য ভান্ডার তৈরি করা যেতে পারে।

৬. ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জের উপর ভ্যাটের হার ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% এ নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত।

৭. যেসব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শুধু নিজেদের পণ্য ডেলিভারি করে, তাদের ডেলিভারি চার্জের উপর ভ্যাট রহিত করা উচিত।

৮. ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দ্বৈত ভ্যাট আদায়ের প্রক্রিয়া বন্ধ করে একটি সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক কর কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।

৯. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি নিয়মিত সংলাপের ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে এই খাতের সমস্যাগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা যায়।

১০. ই-কমার্স ব্যবসার সাথে জড়িত সকল পক্ষের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা প্রয়োজন।

অনলাইন ব্যবসার জন্য কিছু পরামর্শ
  • নিয়মিত এনবিআর-এর আপডেট দেখুন
  • পেশাদার ট্যাক্স পরামর্শকের সহযোগিতা নিন
  • ব্যবসা শুরুতেই TIN ও VAT রেজিস্ট্রেশন করুন
  • সঠিক ইনভয়েস ও ট্রানজেকশন হিসাব রাখুন
  • আয়কর রিটার্ন নিয়মিত জমা দিন

বাংলাদেশে ই-কমার্স একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান অত্যন্ত জরুরি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবসা আরও দ্রুত বিকশিত হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। অনেক অনলাইন ব্যবসায়ী সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ায় ভ্যাট ও ট্যাক্স জমা দিতে দেরি করে ফেলে বা জরিমানার মুখে পড়ে।
ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেডের ভ্যাট (VAT) ও ট্যাক্স (Tax) সেবা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আজই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন! আপনার টিআইএন, বিআইএন যাত্রার প্রথম পদক্ষেপটি হোক আমাদের সাথে!

আপনার ব্যবসার দিগন্ত প্রসারিত করুন আমাদের সেবার মাধ্যমে:


• কোম্পানি নিবন্ধন (𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐂𝐨𝐦𝐩𝐚𝐧𝐲)
• যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসা (Partnership Firm)
• ট্যাক্স অ্যাডভাইজরি
• ভ্যাট কনসালটেন্সি
• অ্যাকাউন্টিং সমাধান
• ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন (নতুন/নবায়ন)
• টিআইএন, বিআইএন নিবন্ধন
• ট্রেড মার্ক এবং কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন
• IRC এবং ERC রেজিস্ট্রেশন
• BIDA নিবন্ধন এবং BIDA সম্পর্কিত কাজ
• এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
• ফায়ার লাইসেন্স
• প্রিমাইজ লাইসেন্স
• বিএসটিআই থেকে সার্টিফিকেশন মার্ক (সিএম) লাইসেন্স
• ফাউন্ডেশন এবং সোসাইটি নিবন্ধন
• খসড়া কোম্পানি/ ব্যবসায়িক প্রোফাইল
• চুক্তির খসড়া


আপনাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে সে সম্পর্কে আরও জানতে আজই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!

আরো পড়ুন : কিভাবে একটি লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে হয়? কোম্পানি নিবন্ধন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ।


 পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর 

আপনার কোনো আইনি বিষয় বা বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন আছে? যে কোন আইনি পরামর্শ পেতে আপনার নাম-ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার সহ আপনার প্রয়োজনীয়তা বা সমস্যা বিস্তারিত লিখে আমাদের ই-মেইল করুন ( digitallawfirmlimited@gmail.com ) অথবা নিকটস্থ চেম্বারে সরাসরি চলে আসুন।

ডিজিটাল ল' অ্যান্ড কনসালট্যান্সি ফার্ম লিমিটেড

প্রধান কার্যালয় : উত্তর খামের, কাপাসিয়া, গাজীপুর - ১৭৩০
মোবাইল: +৮৮০১৯১০১১২৯৮৩, +৮৮০১৯৫৫৩৭৬১৪৯ হেল্পলাইন:: +৮৮০৯৬৯৬১১২৯৮৩

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ