Header Ads Widget


 

নিলাম রুখে দাঁড়ানোর উপায় : আপনার সম্পত্তি, আপনার লড়াই!

ব্যাংক থেকে গৃহঋণ বা অন্য কোনো ঋণ গ্রহণের পর, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে আপনার সাধের সম্পত্তি নিলামে উঠে। বাংলাদেশের শহর বা গ্রাম , যেখানেই হোন না কেন, আজকাল জাতীয় দৈনিক খুললেই চোখে পড়ে ব্যাংক নিলামের বিজ্ঞপ্তি। এই বিজ্ঞপ্তিগুলোর পেছনে রয়েছে অনেক মানুষের দুঃখের গল্প। যারা সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তাঁদের জামানত রাখা সম্পত্তি একসময় চলে যায় নিলামে। কিন্তু এই নিলামের পর্যায়গুলো আসলে কেমন হয় এবং কিভাবে আপনি আপনার সম্পত্তি রক্ষার জন্য লড়াই করতে পারেন? আসুন, বিষয়টি একটু পরিষ্কারভাবে জেনে-বুঝে নিই।
নিলাম

সাধারণত, যখন আপনি ব্যাংক থেকে লোন নেন, তখন একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে। যদি আপনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তবে ব্যাংক প্রথমে আপনাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে। সাধারণত এক বা দুই মাস কিস্তি বকেয়া থাকলে ব্যাংক আপনাকে ফেইলর বা ব্যর্থতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

এরপর, পরিস্থিতি আরও গুরুতর হলে, ব্যাংক আপনাকে আইনি নোটিশ প্রেরণ করে। এই নোটিশ প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে সতর্ক করা এবং বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য একটি সুযোগ দেওয়া। প্রায় ছয় মাস পর ব্যাংক আপনাকে লিগ্যাল নোটিশ দিবে। 

পরপর কয়েকটি নোটিশ দেওয়ার পরেও যদি আপনি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তবে ব্যাংক আপনার বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা করার অধিকার লাভ করে। তবে মামলা করার পূর্বে, ব্যাংক লোন নেওয়ার সময় আপনি যে সম্পত্তি জামানত হিসেবে রেখেছিলেন, সেটি বিক্রি বা নিলামে তোলার চেষ্টা করে। নিলামে সম্পত্তি বিক্রি করতে না পারলে, তখন ব্যাংক অর্থঋণ মামলা করার অনুমতি পাবে।

১২ এর ধারা: সমঝোতার সুযোগ এখনও খোলা

মামলা শুরুর পূর্বে সম্পত্তি বিক্রির এই প্রক্রিয়াটি '১২ এর ধারার নোটিশ' নামে পরিচিত। এই ধারার অধীনে, ব্যাংক আপনাকে একটি নোটিশ প্রেরণ করে। এই নোটিশ আপনার এলাকার জনসমাগমস্থলে, মাইকিং করে অথবা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বসাধারণকে জানানো হয়।

তবে, ১২ এর ধারার নোটিশ পাওয়ার পরেও ঋণগ্রহীতার জন্য ব্যাংকের সাথে একটি সমঝোতায় আসার সুযোগ থাকে। এই পর্যায়ে ঋণ গ্রহীতা চাইলেই ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে , একটা সমঝোতায় গিয়ে ব্যাংককে নিলাম থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

৩৩ ধারা: যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

কিন্তু যখন ব্যাংক ৩৩ ধারায় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর কারণ হলো, ব্যাংক যখন কোনোভাবেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে আপনার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে ব্যর্থ হয় এবং ১২ এর ধারায় চেষ্টা করেও কোনো ফল পায় না, তখন আপনার বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা করে। এমনকি মামলায় রায় আপনার বিপক্ষে গেলেও যদি ব্যাংক টাকা আদায় করতে না পারে, তখন ব্যাংক আপনার বিরুদ্ধে অর্থজারি মামলা করলো এই জারি মামলার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ৩৩ ধারার নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

সহজভাবে বলতে গেলে, ৩৩ ধারার নোটিশ প্রমাণ করে যে ব্যাংক আপনার কাছ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য একের পর এক আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তাদের আর কোনো উপায় নেই।

নিলামের বিরুদ্ধে আপনার লড়াই: আইনি পথে প্রতিরোধের সুযোগ

যদি আপনি ৩৩ ধারার নিলামের নোটিশ পান এবং আপনার কাছে কোনো শক্তিশালী আইনি ভিত্তি থাকে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নোটিশটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি সাময়িকভাবে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে ঋণ পরিশোধের জন্য কিছুটা সময় পেতে পারেন।

তবে, যদি ব্যাংক প্রমাণ করতে পারে যে লোন নেওয়ার শুরু থেকেই আপনার ঋণ পরিশোধের কোনো সৎ উদ্দেশ্য ছিল না এবং ব্যাংকের সাথে আপনার লেনদেন সন্তোষজনক ছিল না, তাহলে ৩৩ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে আপনি খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না।

অতএব, বুদ্ধিমানের কাজ হলো আপনার লোন ডিফল্ট হতে হতে এমন এক পর্যায়ে না যাওয়া, যেখানে ব্যাংক ৩৩ ধারার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে অথবা ব্যাংকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার সম্পত্তি শুধু একটি জমি বা ভবন নয়, এটি আপনার স্বপ্ন, আপনার পরিশ্রমের ফল। তাই নিলাম ঠেকাতে এখনই উদ্যোগ নিনআপনার সম্পত্তি, আপনার লড়াই!

ঋণ বিষয়ক যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন এবং নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা আপনার বিশ্বস্ত সহযোগী হতে প্রস্তুত। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ