অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হলে করণীয়

News & Event

শুভ্র সিনহা রায় :  আক্তার বৃষ্টি। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরই পোশাক কিনেন। আর এই পোশাক কিনতে গিয়ে তাঁকে রাস্তায় অসহ্য জ্যাম আর ভিড়ের কবলে পড়তে হয়। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ কারণে সময় নিয়ে কাপড় বাছাই করতে পারেন না। শেষ মুহূর্তে এসে হাতের কাছে যাই পান তাই নিতে হয়। তবে এবারে বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক কেনার পরিকল্পনা করেন তিনি।

পছন্দ হওয়ায় একটি ফেসবুক পেজ থেকে বৃষ্টি একটি থ্রি-পিস অর্ডার দেন। সময়মতো বাসায় ডেলিভারি পান। কিন্তু পণ্য হাতে পাওয়ার পর তাঁর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কারণ, কাঙ্ক্ষিত মানের পণ্য পাননি তিনি। তাঁর মনে হয়েছে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। অভিযোগ জানিয়ে অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তাঁরা পণ্য পরিবর্তন বা ফেরত নিতে অস্বীকার করে।

এখন ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন। এ নিয়ে তিনি একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। আইনজীবীর সেই পরামর্শ এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আইনজীবী : আপনি যদি অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হন তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে এবং প্রতারণার অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারবেন। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন  তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। আপনি সেই জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অধিদপ্তর থেকে ফেরত পাবেন।

দেওয়ানি বা ফৌজদারি আদালতে মামলা :

প্রথমেই অনলাইনে প্রতারণার শিকার হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার পর সেটার রশিদ বা ক্যাশমেমো দিয়ে জেলা জজ আদালতে অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করতে পারবেন। আদালত আপনার অভিযোগ যাচাই-বাচাই করবেন। এবং  অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিবেন। যদি আদালতে আপনার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দিতে পারেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ।

ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ :

অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হবে। অনলাইনে প্রতারিত হওয়ার পর ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। সেক্ষেত্রে আপনি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে অথবা ওয়েবসাইটে দেওয়া মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারবেন। সেই অভিযোগের পরে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অনলাইন প্রতিষ্ঠান ও অভিযোগকারীর কাছে পোস্টাল রশিদের মাধ্যমে চিঠি পাঠাবেন।

দুই পক্ষ থেকে শুনানি শেষে অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা হিসেবে যে টাকা আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে দেওয়া হবে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *