একের পর এক মামলায়ও দমেনি প্রতারক ইদ্রিছ

News & Event

কারও কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ব্যবসার নামে। কারও কাছ থেকে ধার নিয়েছে বিপদে পড়ার কথা বলে। কখনও ফ্ল্যাট বিক্রির পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেয়নি চুক্তি মোতাবেক সুযোগ-সুবিধা। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকে নিয়েছে গাড়ির লোন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত কোটি টাকা। ‘দুর্ধর্ষ’ এই প্রতারকের নাম মো. ইদ্রিছ। বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার আমিন জুট মিল এলাকায়। প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছে। জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আশ্রয় নিয়েছে প্রতারণার।
নগরীর আমিন জুট মিল উত্তর গেটের কাছে ‘ইদ্রিছ ভবন’ নামে একটি বহুতল ভবনের মালিক মো. ইদ্রিছ। এই ভবনের চতুর্থ তলায় ১৪শ’ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট (১০০ বর্গফুটের পার্কিং স্পেস, গ্যাস লাইনসহ) কেনেন আসাদ ইকবাল নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। পুরো টাকা পরিশোধ করার পাঁচ বছর পরও পার্কিং বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো গ্যাসলাইন পুনঃস্থাপন বাবদ আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে ইদ্রিছ। পার্কিং স্পেস বুঝিয়ে দিতে বললেই দেয় হুমকি। মিথ্যা মামলা করে হয়রানিরও ভয় দেখায়। এ ঘটনায় আসাদ ইকবাল ইদ্রিছের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক ইলিয়াছ খান।
সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই ভাড়াটিয়া না থাকার সুযোগে ফ্ল্যাটে হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায় ইদ্রিছ। ভুক্তভোগী আসাদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে তার সঙ্গে কথা বললে ইদ্রিছ আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় গত ৩১ জুলাই বায়েজিদ বোস্তামী থানায় অভিযোগ দিই। বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসাদ ইকবালের ক্রয় করা ফ্ল্যাটে হামলা, জিনিসপত্র চুরি ও পার্কিং স্পেস বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত মো. ইদ্রিছ দীর্ঘদিন ধরে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। জেলও খেটেছে কয়েকবার। বাসায় একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ফোন দিলে পাওয়া যায় না। তার অবস্থান নিশ্চিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন।
ইদ্রিছের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে ন্যাশনাল হাউজিংও। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ইদ্রিছ একজন সিরিয়াস প্রতারক। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি আমরা। করোনার কারণে সেই মামলার রায় আটকে আছে। অর্থঋণ আদালতে শিগগিরই আরও একটি মামলা করব। তাকে আটক করতে একাধিকবার বাসায় গিয়েও পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সে।’
ইদ্রিছের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী দোলন বড়ূয়া। সমস্যার কথা বলে ঘনিষ্ঠ একজনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নেয় ইদ্রিছ। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সে টাকা ফেরত দেয়নি। দোলন বড়ূয়া বলেন, টাকা ফেরত চাইলেই হুমকি-ধমকি দেয় ইদ্রিছ। ভয় দেখায় মামলা করারও। টাকা উদ্ধার করতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছি। আদালত আমার পক্ষে রায়ও দেন। ওয়ারেন্ট জারি করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে কারাগারে পাঠায়। এখনও টাকা ফেরত পাইনি।
ব্যবসায়ী মো. এনামের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ নেয় মো. ইদ্রিছ। টাকা নেওয়ার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এক টাকাও পরিশোধ করেনি সে। বর্তমানে একটি শিপিং এজেন্টের জিএম মো. এনাম সমকালকে বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করার নামে ২০১২-১৩ সালের দিকে ছয় লাখ টাকা ধার নেয় ইদ্রিছ। প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর টাকা উদ্ধার করতে মামলা করি। টাকা ফেরত চাইলে আরও ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয় সে। তাকে উপকার করতে গিয়ে উল্টো আমার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি।’
ব্যবসা দেখিয়ে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি পূবালী ব্যাংক খাতুনগঞ্জের কোরবানিগঞ্জ ব্রাঞ্চ থেকে সাত লাখ টাকার কার লোন নেয় ইদ্রিছ। পাঁচ বছরেও সেই টাকা পুরোপুরি পরিশোধ করেনি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চেক প্রতারণার মামলাও করেছে ইদ্রিছের বিরুদ্ধে। সেলকন সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে মো. আবু সোয়েবের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এ লোন নেয় ইদ্রিছ। আবু সোয়েব বলেন, সাত লাখ টাকার লোন নিয়ে গাড়ি নিয়েছিল ইদ্রিছ। টাকা উদ্ধার করতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তার বাসায় গিয়েও অনেকবার ধরনা দিয়েছি। কোনো কিছুতেই সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না।
লোন নিয়ে টাকা ফেরত না দেওয়ায় ইদ্রিছের বিরুদ্ধে তিন লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক প্রতারণার মামলা করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট অফিসার লিটন নাথ। একই প্রতারণার কারণে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আবছার উদ্দিন মাহমুদ।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে ইদ্রিছের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ফোন দিলেও সে ফোন ধরে না।

সূত্রঃঃ দৈনিক সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *