কি ভাবে একটা লিমিটেড কোম্পানী গঠন করতে হয়? কোম্পানী নিবন্ধন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ।

News & Event আইনি পরামর্শ

বিশ্বের অন্যসকল দেশের মত বাংলাদেশেও কোম্পানী রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিছু ইনিশিয়াল এবং অন-গোয়িং রেগুলেটরি রিকোয়ারমেন্টস্‌ ফুলফিল করার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের কোম্পানী রয়েছে- ১. প্রাইভেট লিমিটেড এবং ২. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী।

বাংলাদেশে বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইন অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন অংশীদার বা পার্টনার প্রয়োজন হয় অপরদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ৭ জন এবং সর্বোচ্চ যেকোন সংখ্যার পার্টনার হতে পারে। তবে রিসেন্টলি কোম্পানী আইনের সংশোধনিতে One Person Company (OPC) বা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তির দ্বারা একটি কোম্পানী খোলার বিধান রাখা হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কি ভাবে বাংলাদেশে একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর নিবন্ধন নেওয়া যায়, কত সময় লাগে, কত টাকা খরচ হয় ইত্যাদি যাবতীয় বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে।

কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশন প্রকৃয়া সম্পর্কে আলচনা শুরু করার পূর্বে কিছু বেসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা অত্যান্ত জুরুরী-

আপনি যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটা দোকান বা ছোট পরিসরে একটা বিজনেস শুরু করেন, তাহলে আপনি শুধু মাত্র একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, এবং সেক্ষেত্রে আপনি হবেন ঐ ব্যবসায়ের স্বত্বাধিকারী বা প্রোপাইটর বা মালিক এবং আপনি যদি একটা কোম্পানী গঠন করেন, সেক্ষেত্রে আপনি হবেন ঐ কোম্পানীর চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ডিরেক্টরস্‌দের একজন,  বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

একটা সোল-প্রোপাইটরশিপ কনসার্ন বা একমালিকানা ব্যবসা শুরু করার জন্য কোন ধরনের আইনি জটিলতা না থাকলেও একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি শুরু করার ক্ষেত্রে বেশকিছু লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স রয়েছে….

ক্যাপিটাল নির্ধারন করাঃ

যে কোন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কিছু পুঁজি বা মূলধন বা ক্যাপিটাল দকরার হয়, এই মূলধন বিভিন্ন প্রকার হয়, যেমন- ইনিশিয়াল ক্যাপিটাল, শেয়ার ক্যাপিটাল, ইক্যুইটি ক্যাপিটাল, নিট ক্যাপিটাল সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যাপিটাল রয়েছে, যা আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই ধরনের ক্যপিটাল হল অথরাইজড ক্যাপিটাল বা অনুমোদিত মূলধন এবং পেইড আপ ক্যাপিটাল বা পরিশোধিত মূলধন।

কোন একটা কোম্পানী শুরুর সময় ঐ কোম্পানীর সর্বোচ্চ মূলধনের যে সীমা নির্ধারন করা হয় এবং অনুমোদন করা হয় সেটাই হল ঐ কোম্পানির অথরাইজড ক্যাপিটাল;

ধরুন আপনার কোম্পানীর অথরাইজড ক্যাপিটাল ১০০০৳, এবং পার্টনার ১০ জন, তাহলে ১০০ টাকা করে দশ জনের ভেতর সর্বোচ্চ ১০ টি শেয়ার বন্টন করা যাবে।

পরিশোধিত মূলধন বা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হল অনুমোদিত মূলধন সীমার ভেতরের একটা এমাউন্ট যা আপনার বিজনেস ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকতে হবে……

বাংলাদেশে একটা কোম্পানী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নূন্যতম ১ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল থাকা দরকার হয়। যেমন ধরুন ১০০০/- টাকা অথরাইজড ক্যাপিটাল এর ভেতর ৫০০ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হলে ৫০০ টাকা আপনার বিজনেস ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকতে হবে, ১০০ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হলে ১০০ টাকা জমা থাকতে হবে। এই টাকা পরে ব্যাবসায়ীক প্রয়োজনে যে কোন সময় উত্তোলন ও খরচ করা যায়।

এর পর আরো দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে না বললেই নয়-

মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন বা সংক্ষেপে MOA বা সংঘ স্মারক

মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন হল কোম্পানির লক্ষ ও কার্যাবলী সম্পর্কে বর্ণনা, এতে ব্যবসায়ের নাম, ব্যবসার ধরন, ব্যবসার লক্ষ-উদ্দেশ্য, অনুমোধিত ও পরিশোধিত মূলধনের  পরিমান ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে অবশ্যই লিমিটেড শব্দটি থাকতে হবে।

আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন বা সংক্ষেপে AOA বা সংঘবিধি

আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন কোম্পানির পরিচালনার নিয়মাবলী অর্থাৎ আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের মধ্যে থাকবে কীভাবে কোম্পানি পরিচালক পরিশধ নির্বাচিত হবে, AGM, কোম্পানির সাধারন মিটিং এবং বিশেষ মিটিং কীভাবে কখন সম্পাদিত হবে, কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোন সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যংশ বন্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়।

মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন কোম্পানি আইন বিষয়ক অভিজ্ঞ এরকম একজন আইনজীবীর মাধ্যমে তৈরি করিয়ে নেওয়াই সর্বোত্তম্ম।

Now moving into the main parts…..

STEP-01: নেম ক্লিয়ারেন্স

একটা কোম্পানি নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হল আপনি যেই নামে কোম্পানিটি নিবন্ধন করতে চাচ্ছেন সেই নাম টি এভেইলেবল আছে কি না, তা চেক করা, যদি আপনার কাঙ্খিত নামটি এভেইলেভেল থাকে তাহলে নেম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা। আপনার কোম্পানির নামটি ইউনিক হতে হবে, অর্থ্যাৎ এই নামে বাংলাদেশে অন্য কোন রেজিস্টার্ড কোম্পানি থাকবে না। আপনি খুব সহজে আরজেএসসির সার্ভার থেকে দেখে নিতে পারেন আপনার পছন্দকৃত নামটি এভেইলেভেল আছে কি না, এবং ফ্রী থাকলে আপনি নেম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।


নামের ছাড়পত্র পাওয়ার পর আপনি কোম্পানীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন……

কোম্পানী নিবন্ধন করার জন্য RJSC এর ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় সকল ইনফরমেশন ইনপুট করে, মেমোরান্ডাম অফ এসোসিয়েশন, আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন, পরিচালকদের নামের তালিকা, ইত্যাদি ডকুমেন্টস্‌ স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। সবকিছু সফল ভাবে আপলোড এবং সাবমিট করা হলে, নিবন্ধন ফি সহ অন্যান্ন সরকারী ফিস জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড করার অপশন আসবে। স্লিপটি প্রিন্ট করে নির্ধারিত ব্যাংকে ফিস জমা দিতে হবে। এর পর যৌথমূলধনী কোম্পানীর নিবন্ধকের কার্যালয়ে মেমোরান্ডাম অফ এসোসিয়েশন, আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন এর মূল কপি, ফর্ম- ১, ফর্ম-৬, পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তালিকা, পরিচালকের সম্মতিপত্র, ফর্ম-১২ ইত্যাদি কাগজপত্র যথাযত ভাবে পূরণ করে জমা প্রদান করতে হবে।

এর পর আরজেএসসির কর্মকর্তারা আপনার আপলোডকৃত ডকুমেন্টস্‌ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার কোম্পানি নিবন্ধনের আবেদন টি এপ্রুভ করে দিবে, অর্থ্যাৎ আপনার কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশন সফল হয়েছে এবং আপনাকে ইমেইলে- ই-স্বাক্ষর যুক্ত সার্টিফিকেট অফ ইন-করপরেশন, MOA, AOA এবং ফর্ম- xii পাঠাবে।

এই ডকুমেন্টগুলো প্রাপ্তির অর্থ, আপনার কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরে ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করার জন্য আপনাকে আরও কিছু সনদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যবসায়ের ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে এই সনদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোম্পানি নিবন্ধনের পরে বাধ্যতামূলক যে সনদসমূহ নিতে হবে:

    ট্রেড লাইসেন্স

    কোম্পানীর নামে টিন সার্টিফিকেট

    ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি

সবকিছু রেডি হয়ে গেলে আপনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।

তো বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই, আপনাদের কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল আপনার ইমেইল ইনবক্স করে রাখতে পারেন, পরবর্তী লেখা পড়ার আমন্ত্রন জানাচ্ছি, সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *