বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি

আইনি পরামর্শ নিউজ & ইভেন্ট পাঠকের জিজ্ঞাসা

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি

পক্ষদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিতে ‘আপোষ মীমাংসা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইহাকে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ নামেও অনেকসময় অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে ‘আপোষ মীমাংসা’র জন্য বিভিন্ন আইনে  প্রণীত বিধানগুলোর নিম্নে বর্ণনা প্রদান করা হলো-

ক্রমিক নং  প্রাসংগিক বিধানসমূহ ধারা নিষ্পত্তিকারী ব্যক্তি
১। কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর (সংশোধন) আইন, ১৯০৮ ধারা ৮৯ক, ৮৯খ, ৮৯গ আদালত স্বয়ং অথবা মিডিয়েটরের দ্বারা
২। অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ ধারা ২২, ২৩, ২৪, ২৫
৩। পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ ধারা ১০(৩), ১০(৪) এবং ১৩  আদালতের মাধ্যমে
৪। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ ধারা-৬(খ) স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং উভয় পক্ষের নিযুক্তিয় প্রতিনিধি দ্বারা
৫। কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ ধারা ৩৪৫ চার্টে উল্লিখিত আপোষযোগ্য অপরাধসমূহ
৬। সালিশ আইন, ২০০১ ধারা ২২

কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর, ১৯০৮

কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর, ১৯০৮ এর ধারা ৮৯ক, ৮৯খ, ৮৯গ এ ‘আপোষ নিষ্পত্তি’ সংক্রান্ত বিধানাবলি ২০০৩ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। লিখিত জবাব দাখিলের পরে আদালত শুনানি মুলতুবি রেখে আপোষের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির নিমিত্ত স্বয়ং সচেষ্ট হবে অথবা বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য পক্ষদের নিযুক্তিয় আইনজীবিদের নিকট প্রেরন করবে অথবা জেলা জজ কর্তৃক মিডিয়েশনের জন্য প্রস্তুতকৃত প্যানেল হতে মিডিয়েটরের নিকট প্রেরন করা হবে। অতঃপর উভয় পক্ষের নিযুক্তিয় আইনজীবিগন আলোচনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে মিডিয়েটর হিসেবে নিয়োগ করবে। মিডিয়েশনের আদেশের দশ দিনের মধ্যে পক্ষগন লিখিতভাবে মিডিয়েশন পদ্ধতির অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করবে এবং ষাট দিনের মধ্যে মিডিয়েশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যদি উক্ত কার্যক্রম ষাট দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভবপর না হয় সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ত্রিশ দিন বর্ধিত করা যাবে। আপোষে বিরোধটি  নিষ্পন্ন করা সম্ভবপর হলে মিডিয়েটর উভয় পক্ষ কর্তৃক গৃহীত শর্তাবলি উল্লেখপূর্বক একটি চুক্তি প্রস্তুত করবেন  এবং পক্ষগন, তাদের নিযুক্তিয় আইনজীবিগন ও মিডিয়েটর উহাতে স্বাক্ষর প্রদান করবেন এবং উক্ত চুক্তি আদালতে দাখিল করবেন এবং আদালত সাত দিনের মধ্যে উক্ত চুক্তির আলোকে ‘ডিক্রি’ প্রদান করবে। বিচারক নিজে আপোষ মীমাংসা করে থাকলেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। মিডিয়েশন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে মামলার কার্যক্রম পরবর্তী ধাপ হতে চলমান হবে। কোন মামলার আপীল চলাকালীন ৮৯গ ধারার অধীনে আপোষ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব।

অর্থঋণ আদালত আইন,২০০৩

অর্থঋণ আদালত আইন,২০০৩ এর পঞ্চম অধ্যায়ে  ‘বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির’ বিধি উল্লেখ করা আছে। ধারা ২২ এ উল্লেখিত আছে যে, লিখিত জবাব দাখিলের পরে আদালত বিরোধীয় বিষয়টি  পক্ষদ্বয়ের নিকট অথবা তাদের নিযুক্তিয় আইনজীবির নিকট ‘আপোষ নিষ্পত্তির’ নিমিত্ত প্রেরণ করবে। ‘আপোষ নিষ্পত্তি’র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পরে উভয় পক্ষ ও তাদের নিযুক্তিয় আইনজীবি এবং মিডিয়েটর কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে।  বিরোধটি আপোষে নিষ্পন্ন করা সম্ভবপর হলে প্রতিবেদনের শর্তাবলি একটি লিখিত চুক্তির আকারে আদালতে দাখিল করতে হবে।  অতঃপর আদালত উক্ত  চুক্তির আলোকে ‘ ডিক্রি’ প্রদান করবে।

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫

লিখিত জবাব দাখিলের পরে, পারিবারিক আদালত মামলার ‘পূর্ব-শুনানী’র জন্য  দিন ধার্য করবে। পূর্ব-শুনানীর জন্য ধার্য দিনে, আদালত উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধটি আপোষে নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে।

গ্রাম আদালত আইন,২০০৬

গ্রাম আদালত গঠিত হবার পরে  উভয় পক্ষকে শুনানী অন্তে  আদালত উভয় পক্ষের মধ্যকার বিচার্য বিষয় নির্ধারন করবে এবং উভয় পক্ষের  বিরোধ আপোষে মীমাংসার চেষ্টা করবে। আপোষে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর হলে তা চুক্তিতে লিপিবদ্ধ করে উভয় পক্ষ এবং তাদের মনোনীত সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। অতঃপর গ্রাম আদালত তদানুযায়ী ‘ডিক্রি অথবা আদেশ’ প্রদান করবে।

কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮

কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ৩৪৫ ধারায় ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে উক্ত ধারায় উল্লেখিত অপরাধসমূহের জন্য আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সালিশ আইন, ২০০১

সালিশ আইন,২০০১ এর ২২ ধারা আপোষ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তির সুযোগ প্রদান করেছে। উক্ত আইন অনুযায়ী আপোষের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির নিমিত্তে মামলার যে কোন পর্যায়ে উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে  বিরোধটি মধ্যস্থতার জন্য প্রেরন করা যেতে পারে। বিরোধ চলমান থাকাকালে উভয় পক্ষ আপোষে বিরোধটি নিষ্পত্তি করলে এবং ট্রাইব্যুনালকে উক্ত বিষয়  অবহিত করলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত সম্মতি রেকর্ডপূর্বক ট্রাইব্যুনালের ‘আদেশ’ প্রদান করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *